কাঠমান্ডুর এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল বা এটিসির সঙ্গে সোমবার ভেঙ্গে পড়া ইউএস বাংলা-র বিমানটির পাইলটের কথোপকথন দুর্ঘটনার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে ইউটিউবে। তার ভিত্তিতেই দোষারোপের পালা চলছে যে কার ভুলে দুর্ঘটনায় পড়েছিল বিমানটি।
ওই কথোপকথন রেকর্ড করা বা পাবলিক ডোমেইনে প্রকাশ করে দেওয়াটা বেআইনি।
কিন্তু ভারতের অ্যামেচার রেডিও অপারেটররা বলছেন, ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন বা আইটিইউ-র নির্দেশিকা ভেঙ্গেই এধরনের কথোপকথন শোনা এবং রেকর্ডিং করা বহু দেশেই চলছে, ভারতেও চলছে।
ইউএস বাংলার পাইলট আর কাঠমান্ডু এটিসি-র এই কথোপকথন এমন একটি ওয়েবসাইটে প্রথম দেয়া হয়েছিল যে সাইটে বিশ্বের বহু এটিসির সঙ্গেই পাইলটদের কথাবার্তার রেকর্ডিং পাওয়া যায়।
ওই ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তারা নানা দেশে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ করেন এটিসি এবং পাইলটদের মধ্যে কথোপকথন শোনা এবং তা লাইভস্ট্রিমিং করার জন্য।
এর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতিও অনেক সময়ে ওই ওয়েবসাইটটিই যোগান দিয়ে থাকে।
ভারতের ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অফ অ্যামেচার রেডিও-র অধিকর্তা এস. রামমোহন বিবিসি বাংলাকে বলেন, “এটিসি এবং পাইলট কোন ফ্রিকোয়েন্সিতে কথা বলছেন, এটা যদি কেউ জানতে পারে আর তার কাছে যদি ভিএইচএফ রেডিও যন্ত্রপাতি থাকে, তাহলে এই কথোপকথন শোনা এবং রেকর্ড করা সম্ভব।”
“এটা কোনও এনক্রিপ্টেড বার্তালাপ নয়। সাধারণ ভিএইচএফ বা ভেরি হাই ফ্রিকোয়েন্সি স্পেকট্রামেই কথা বলে এটিসি এবং পাইলটরা”।
তিনি বলেন, কারিগরি দিক থেকে এই বার্তালাপ শোনা কঠিন নয় কিন্তু এটা সারা পৃথিবীতেই বেআইনি।
আইটিইউ-র নিয়ম অনুযায়ী একজন রেডিও অপারেটরকে যে ফ্রিকোয়েন্সি দেওয়া হয়েছে, তিনি তার বাইরে যেতে পারেন না।
তবে আবহাওয়ার কারণে অনেকসময়েই অ্যামেচার রেডিও অপারেটরদের যন্ত্রেও পাইলট এবং এটিসি-র মধ্যেকার কথাবার্তা চলে আসে ক্ষণিকের জন্য।
মি. রামমোহনের কথায়, “কোনও লাইসেন্সধারী রেডিও অপারেটর টিউন করার সময়ে তার নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির বাইরে ঢুকে পড়তেই পারেন। সেটা বেআইনি নয়। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ ধরে সেটা শোনা এবং রেকর্ড করে পাবলিক ডোমেইনে ছড়িয়ে দেওয়াটা আইটিইউ-র নিয়ম বিরুদ্ধ। কোনও লাইসেন্সধারী রেডিও অপারেটর এই কাজ করবে না।”
কলকাতা বিমানবন্দরের কাছাকাছিই থাকেন পশ্চিমবঙ্গ অ্যামেচার রেডিও ক্লাবের সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাস।
তিনি বলছিলেন যে তার রেডিও যন্ত্রেও মাঝে মাঝে এটিসি এবং পাইলটদের মধ্যেকার কথোপকথন তিনি শুনতে পেয়েছেন।
তিনি বলছিলেন, “লাইসেন্স দেওয়ার পরে যে ভিএইচএফ রেডিও দেওয়ার কথা, সেগুলোতে ফ্রিকোয়েন্সি লক থাকার কথা। আমার নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সির বাইরে যাতে যেতে না পারি। কিন্তু আমাদের কাছেই এমন অনেক যন্ত্র চলে আসে, যেগুলোর ফ্রিকোয়েন্সি ওপেন রাখা আছে। সে ধরণের যন্ত্র দিয়েই সোমবারের কাঠমান্ডু এটিসি আর বিমানের পাইলটের মধ্যেকার কথোপকথন কেউ রেকর্ড করেছে।”
কিন্তু সোমবারের দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের পাইলট এবং কাঠমান্ডু এটিসি-র মধ্যে যে কথাবার্তা ইউ টিউবে দেওয়া হয়েছে, তা ক্ষণস্থায়ী কথা নয়, প্রায় ২৫ মিনিটের রেকর্ডিং।
“এটা এমন কেউ বেআইনিভাবে রেকর্ড করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে, যে কাঠমান্ডু টাওয়ারের ৭০-৮০ কিলোমিটারের মধ্যেই থাকে। যদি তার কাছে খুব উন্নতমানের ভিএইচএফ ইকুইপমেন্ট না থাকে, তাহলে ৪০ কিলোমিটার মতো রেঞ্জ হওয়ার কথা সাধারণ সেটগুলোর। এগুলো যারা করে, তারা নিজেদের নাম লুকিয়েই সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। ওই ওয়েবসাইটে কারও আসল নাম খুঁজে পাবেন না।”
কীভাবে রেকর্ডিং করা হয় এটিসি এবং পাইলটদের মধ্যে কথোপকথন?
“সফটওয়্যার ডিফাইন্ড রেডিও বা এসডিআর বলে একটা ব্যবস্থা আছে। ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে সারা দিনই এসডিআর চালিয়ে রাখে অনেকে। আপনা থেকেই নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে ভেসে আসা সব রেডিও বার্তালাপ রেকর্ডিং হয়ে যায় কম্পিউটারে,” বলছিলেন মি. নাগবিশ্বাস।
এই বেআইনিভাবে রেকর্ড করা কথোপকথন নিয়েই এখনও সামাজিক মাধ্যমেও আলোচনা চলছে যে সোমবারের দুর্ঘটনার জন্য কে দায়ী।
তবে তদন্তকারীরা ইউটিউবে ফাঁস হওয়া কথোপকথনে হয়তো কানই দেবেন না।
তারা বিমানটির ব্ল্যাকবক্সে যে কথোপকথন রেকর্ড করা রয়েছে, সেটাকেই প্রামাণ্য বলে মনে করবেন।
সূত্র, বিবিসি